আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ভারতকে ‘কী কী দেওয়া হয়েছে’ তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরে এই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, “আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই যে বলেছেন ভারতকে অনেক দিয়েছেন। আমরা ভালো করে জানি না। আপনি দয়া করে কী কী ভারতকে দিয়েছেন আপনি জনগণের সামনে প্রকাশ করুন।”
সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে মঙ্গলবার গণভবনে ওই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনার বলেছিলেন, “আমরা ভারতে যা দিয়েছি সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি; আমরা কিন্তু ওদের শান্তি ফেরত দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা ওগুলোর প্রতিদান চাই না।”
নিজের ‘চাওয়ার অভ্যাস কম, দেওয়ার অভ্যাস বেশি’ বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তার ওই বক্তব্য নিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “জনগণ আপনাকে অবিশ্বাস করে যে, আপনি কেবল ভারতে দিতে পারেন কিন্তু ভারত থেকে আনার ক্ষমতা নাই। আপনি বলেছেন যে, উনার নাকি চাওয়ার অভ্যাস কম।
“বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা-মরার যে সমস্যা পানি -এটা চাওয়ার যদি অভ্যাস কম থাকে তাহলে এদেশের জনগণ আপনাকে সেভাবে এদেশ থেকে বিতাড়িত করবে, আপনার সরকারের পতন ঘটাবে।”
সরকারের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, “আজকে অন্যায়ভাবে সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকারই তাকে কারাগারে আবদ্ধ রেখেছে। সরকার যদি আবদ্ধ না রাখতেন তাহলে হাই কোর্টে জামিন হওয়ার পরে সরকার পক্ষ থেকে আপিল করল কেন? সরকারের নির্দেশ ছাড়া অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া এই আপিল করা সম্ভব নয়।
“এই আপিল করে আবার আপিল বিভাগের এভাবে জামিন স্থগিত করা-এটা সর্বোচ্চ জায়গা থেকে ইঙ্গিত না হলে এই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ করতে পারে না। সরকারই আদালতকে পূর্ণাঙ্গভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখেছে।”
খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে ‘প্রহসনের নির্বাচন করার’ উদ্দেশ্যেই বিএনপি নেত্রীর মুক্তি আটকানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “যে আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়, যে আন্দোলনে স্বৈরাচারের টনক নড়ে- সেই আন্দোলন আমাদের করতে হবে।
“সেই ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।”
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারও ‘প্রহসনের নির্বাচনের’ দিকে অগ্রসর হলে জনগণ তা হতে দেবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেভাবে রাস্তা বন্ধ করতে হয় সেভাবে রাস্তা জনগণ বন্ধ করবে এবং আমরা জনগণের পাশে থাকব।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের মুক্তি দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম।
সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, খালেদা ইয়াসমীন, খন্দকার মারুফ হোসেন, শাহ মো. নেসারুল হক, লেবার পার্টির একাংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সূত্র: বিডিনিউজ