নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি ঈষান্বিত হয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তিনি আরো দাবি করেছেন, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) একটি সন্ত্রাসী (মিলিট্যান্ট) সংগঠন। তারা আইএসআইয়ের সহায়তায় আরাকানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত আরাকানের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি করেছে আইএসআই।
মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ ইন্ডিয়া টুডে’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন। এতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে তাদের স্বভূমে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। এখন এসব রোহিঙ্গার বাসস্থান ও তাদের বিভিন্ন চাহিদা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে দেশের জন্য। এ ছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা ও অপরাধমুলক কর্মকা- বৃদ্ধির আশঙ্কাসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে পাকিস্তাটি একটি অংশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করবে। এখানে ওই সাক্ষাতকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসাকে মদত দিচ্ছে?
আবদুর রশিদ: হ্যাঁ। আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখেছি। বিভিন্ন সংগঠনও সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব পেয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেছে যে, আরসা’কে সক্রিয় করতে বা তাদের উত্থান ঘটাতে তাদেরকে উস্কে দিচ্ছে আইএসআই। তাই (নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের) ৩০ টি ক্যাম্পে তারা হামলা চালিয়েছিল। আমি মনে করি এতে আইএসআইয়ের মদত আছে। আইএসআই শুধু রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের উসকে দিচ্ছে এমন নয়, তারা বাংলাদেশ ও ভারতের ভিতরে অন্যান্য উগ্রপন্থি সংগঠনকেই মদত দিচ্ছে। তাই আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে, এমন গোয়েন্দা সংগঠন যেন এই অঞ্চলে কাজ করার কোনো সুযোগ না পায়।
প্রশ্ন: রোহিঙ্গা ইস্যুকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আবদুর রশিদ: রোহিঙ্গা সঙ্কট এক ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সমীকরণ নষ্ট করে দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে আমি দেখতে পাচ্ছি বিবিআইএন, বিমসটেক, সিকিআইএম-এর মতো বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক পদক্ষেপ বা কর্মসূচিতে অবলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাত্র একটি ইস্যুতে। তা হলো রোহিঙ্গা। আমি দক্ষিণ এশিয়ায় মেরুকরণে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ শুধু সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে এর সমাধান করা যায় কিভাবে সেই পথই খুঁজছে।
প্রশ্ন: সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসছে আরাকান উগ্রপন্থি বা সন্ত্রাসীরা। আপনি কি একমত?
আবদুর রশিদ: এমনটা হবেই এটা বলা অনাবশ্যক। সব রোহিঙ্গাই যে উগ্রপন্থি বা সন্ত্রাসী এমনটা ভাবা অনুচিত। তবে তাদের সঙ্গে উগ্রপন্থিরা মিশে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে এবং বাংলাদেশে এসে থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এই মুহূর্তে এটা ভাল বিষয় যে, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশে ক্ষমতায় ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। তাই আমি নিশ্চিত, তারা (উগ্রপন্থিরা) বাংলাদেশে কোনো ঠাঁই পাবে না। এটা এ অঞ্চলের জন্য ভাল বিষয়। আমি মনে করি রোহিঙ্গা সঙ্কট শুধু বাংলাদেশের জন্য হুমকি এমন নয়, এটা আপনি জানেন, ভারত, চীন সহ পুরো অঞ্চলের জন্যই একটি সঙ্কটের কারণ হতে পারে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে সতর্ক থাকতে হবে যে, এটা হলো বস্তুত জাতিগত সমস্যা, ধর্মীয় সমস্যা নয়। এক্ষেত্রে খুব শিগগিরই আমরা সঙ্কটের সমাধান করতে সক্ষম হবো। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে অবশ্যই উগ্রপন্থা বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসে লিপ্ত হতে পারবে বলে আপনি মনে করেন কি?
আবদুর রশিদ: না। আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। বাংলাদেশে আমরা আরো সন্ত্রাসী সংগঠন দেখেছি। তারা বাংলাদেশে ঠাঁই পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সরকার ও জনগণ তাদেরকে রুখে দিয়েছে। আগেই আমি বলেছি, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ সন্ত্রসীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায় না। সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটতে দেয় না।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা কি বাংলাদেশের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে?
আবদুর রশিদ: হ্যাঁ। এটা একটি বড় প্রশ্ন। যেহেতু এটা শুধু সন্ত্রাসী হুমকি নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে আরো অনেক বিষয়। আমরা দেখেছি, এটা একটি সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা, পরিবেশগত সমস্যা। আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদী হবে। এ কারণে, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। তারা আরো একবার আভ্যন্তরীণভাবে ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post