চিকিৎসা বিল পরিশোধ করতে না পারায় প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার সাভারের আওয়ামী লীগ এমপি ডা. এনামুর রহমান এনামের মালিকানাধীন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতক ও তার মা বন্দিদশায় রয়েছে এমন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কয়েকটি গণমাধ্যম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমসে ‘বিল বকেয়া, এনাম হাসপাতালে ‘বন্দী নবজাতক ও মা’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এনাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো চিকিৎসা বিলের প্রায় ৫ লাখ টাকা মওকুফ করে।
বুধবার বিকালে ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ ও এনাম মেডিকেলের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. এনামুর রহমানের নির্দেশে ওই নবজাতক ও তার মা এ্যাপি আক্তারকে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয় বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেন এ্যাপির স্বামী আনিসুর রহমান।
এসময় সাংসদের স্ত্রী ও এনাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক রওশন আরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
আনিসুর রহমান জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে অবশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে দিয়েছে। এ জন্য সাংসদ ও এনাম মেডিকেল কলেজের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. এনামুর রহমানকে ধন্যবাদ জানাই।
তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কাদের নাজিমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই প্রসব বেদনার কারণে স্ত্রী এ্যাপি আক্তারকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান স্বামী আনিসুর রহমান। পরে টানা নয়দিন ভর্তি থাকার পর ২৫ জুলাই এ্যাপি সিজারের মাধ্যমে একটি সন্তান জন্ম নেয়। এরপর গত ১৭ আগস্ট নবজাতক ও মা সুস্থ থাকার পর হাসপাতালের বিল ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রায় দুই মাস ধরে তাদের নজরদারিতে রাখার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
তখন আনিসুর রহমান অভিযোগ করেছিলেন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখের বেশি টাকা বিল করেছে। গ্রামের শেষ সম্বল ভিটে-মাটি বিক্রি করে এ পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় সাত লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেন তারা। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দেওয়ার মতো আর কোনো অর্থ নেই তাদের কাছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং বারবার ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। উপায়ন্তু না পেয়ে সর্বশেষ তিনি সাভার মডেল থানার শরণাপন্ন হলে সেখান থেকেও তাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে তখন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. নাজিম বলেছিলেন, ‘ব্যাপারটি হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী সাংসদ ডা. এনামুর রহমান অবগত আছেন। এ ব্যাপারে আপনি তার সাথেই কথা বলুন।’ এ কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
এর আগেও অগ্নিদগ্ধ সেলিম মিয়া নামে এক যুবক চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সূত্র: ঢাকা টাইমস (সম্পাদিত)
Discussion about this post